২৫ মার্চ ১৯৭১, রাত আনুমানিক দশটা দশ মিনিট। ট্যাংক, কামান, মেশিনগান আর আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রেসজ্জে সজ্জিত পাকিস্তানী আর্মি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। আজ তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে ঢাকা শহরকে। কিন্তু ফার্মগেটে আসতেই তাদের স্থানীয় জনগনের তৈরি প্রথম ব্যারিকেডের সম্মুখীন হতে হলো। অবশ্য দুর্বল ব্যারিকেড গুড়িয়ে দিতে তাদের সময় লাগল না। তারপর আবার এগিয়ে যেতে শুরু করল সামনের দিকে। গন্তব্য ঢাকা ভার্সিটি, পিলখানা ইপিআর সদরদপ্তর আর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্। তেজগাঁও থানা থেকে ওয়্যারলেসে সাথে সাথে খবরটি জানিয়ে দেয়া হলো রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্। মুহূর্তেই পাগলা ঘণ্টা বেজে উঠল রজারবাগে। রাজারবাগের পুলিশ যে যেখানে যে অবস্থায় ছিল ছুটে এলো অস্ত্রাগারের দিকে। স্বাধীনতার টানে সার্জেন্ট মর্তুজা, হাবিলদার বিনয়, কনস্টবল সালাম, কনস্টবল জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, জাহিদ, ওসমান, রশিদসহ দেশপ্রেমিক শত শত পুলিশ পাক হানাদারদের প্রতিহত করতে ভেঙ্গে ফেলল আইজি রিজার্ভ স্টোরসহ রাজারবাগের কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারের তালা। ঐ রাতেই রাজারবাগের বুকে উত্তোলিত হলো স্বাধীন বাংলার পতাকা। তারপর সবাই ছুটে গেল রাজারবাগের আনাচে কানাচে, সেকেলে থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে পজিশন নিলো ভারী আর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানী আর্মিদের মোকাবেলা করতে। রাত সাড়ে এগারোটায় পাকিস্তানী আর্মি রাজারবাগের সীমানায় পৌঁছান মাত্র গর্জে উঠল পুলিশের থ্রি নট থ্রি রাইফেল, সেই সাথে ছুটে গেল মহান স্বাধীনতা অর্জনে প্রথম বুলেট। পাক হানাদারদের ক্রমাগত আক্রমণ আর পুলিশের পাল্টা জবাবে একই সাথে রাজারবাগের বুকে সূচীত হলো স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। পাকিস্তানী আর্মিদের মেশিনগান, মর্টার, কামান আর ট্যাংকের সামনে এতটুকু পিছিয়ে আসেনি রাজারবাগের অকুতোভয় বীর পুলিশ সদস্যরা। একে একে জীবন উৎসর্গ করতে থাকে তারা। ‘জীবন দিয়ে হলেও দেশমাতৃকাকে পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত করে ছাড়বে- এই ছিল তাদের ব্রত। তাই তো বার বার তারা রুখে দিতে সমর্থ হয় পাকিস্তানী আর্মিদের।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি ঘটেছিল রাজারবাগের সেই যুদ্ধে? তুমুল আর ভয়ংকর সেই যুদ্ধের না জানা অনেক সত্য কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে’ নক্ষত্রের রাজারবাগ’ যা পাঠকদের নিয়ে যাবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বিভীষিকাময় ভয়াল সেই রাতে যেখানে সূচিত হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ।